* সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক তালিকায় ৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩য়
* সীতাকুণ্ডে ২ সাংবাদিকের ওপর হামলা-মারধর, ক্যামেরা ভাঙচুর
* বাগেরহাটে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাংবাদিক নিহত
রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে পেশাগত দায়িত্বপালনকালে একের পর এক দুর্বৃত্তদের দ্বারা খুন-হামলা, মারধর, গুলি এবং হুমকির শিকার হচ্ছে সাংবাদিকরা। এককথায় বলতে গেলে অপরাধীদের টার্গেটই যেন সাংবাদিকদের নির্যাতন নিপীড়ন আর হত্যা করা। এর নেপথ্যের কারণগুলো হচ্ছে-মাদক, চাঁদাবাজি, জমি দখল, এবং অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা। অনেক ক্ষেত্রে, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বা প্রকাশিত সংবাদের জেরে সাংবাদিকরা এসব হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক সমাজ। এসব হামলা-মামলার প্রতিবাদে প্রায়ই জাতীয় প্রেসক্লাব-ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এবং দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিচার চেয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সাংবাদিকদের উপর হামলা-মারধর, হুমকি এবং খুন বেড়েই চলেছে।
সাংবাদিকদের কাজের জন্য বিপজ্জনক দেশের তালিকায় নাম এসেছে বাংলাদেশের। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই তালিকায় নাম আছে পাকিস্তানেরও। তবে এ বছর সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক নয়টি দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের নাম। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। সবচেয়ে বিপজ্জনক নয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। আরএসএফের বার্ষিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমেই অবনতি হতে দেখা যাচ্ছে। গত ৩রা মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আরএসএফ এর গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। আগের বছর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৬৩তম। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংগঠন উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গত তিন মাসে একাধিক বিবৃতি দেয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে গত জুলাইয়ের মধ্যে দেশে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সাত মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাধা ও হামলায় আহত হয়েছেন ২৭৪ জন সাংবাদিক। সম্প্রতি টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনজন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে হামলায় নিহত হয়েছেন। টিআইবি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি।
মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩৩টি ঘটনায় ৯৬ সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগস্টে আক্রান্ত সাংবাদিকদের সংখ্যা জুলাই মাসের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। আর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে চলতি বছর বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ১৩ জন সাংবাদিক গ্রেফতার আছেন। তারা যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু আজ সাত-আট মাস ধরে কারাগারে, তারা জামিন পাচ্ছেন না। তাদের আইনি কোনও প্রক্রিয়া চলছে না। বিচার হচ্ছে না। তাহলে এটা কি চলতে থাকবে? মামলার প্রবণতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন মামলার যে প্রবণতা, তাতে ১০০, ৫০ বা ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, তার মধ্যে একজন সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হলো।
জানা গেছে, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি উন্মোচন করতে গিয়ে চরম বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন দেশের সাংবাদিকরা। সত্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে তাদের। কথায় কথায় সন্ত্রাসীরা তাদের দিচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। এমনকি পুলিশ সদস্য বা অন্য সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা বাড়ছে সাংবাদিককে তলবও করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের কথা না মানলে অনেক ক্ষেত্রে নৃশংসভাবে হত্যাও করা হচ্ছে সাংবাদিকদের। সর্বশেষ ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর অলিনগর এলাকায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। এদিন দুপুরে জঙ্গল সলিমপুরের লোহারপুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় এখন টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান ও বিশেষ প্রতিনিধি হোসাইন জিয়াদ এবং ক্যামেরাপারসন মো. পারভেজ গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। আহত মো. পারভেজ বলেন, তারা অস্ত্র ও গাছের টুকরো দিয়ে আমাদের আঘাত করেছে। মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। ভেঙে দিয়েছে ক্যামেরা। পরে আমাদের জোরপূর্বক অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। আমরা কোনও রকমে সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসি। সাংবাদিক হোসাইন জিয়াদ বলেন, শনিবার জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হন। ওই ঘটনার ফলোআপ সংবাদ করতে সলিমপুরে গেলে ৩০-৪০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমিসহ ক্যামেরাপারসন পারভেজ আহত হই। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দীন তালুকদার বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে হামলায় আহত দুই সাংবাদিককে দুপুরে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে মাথায় আঘাত থাকায় সাংবাদিক হোসাইন জিয়াদকে ২৮ নম্বর নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অপরজনকে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাগেরহাটে হাড়িখালি এলাকায় দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক হায়াত উদ্দিনকে (৪২) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তার শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কারা এ হামলা চালিয়েছে এবং এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ-উল-হাসান জানান, হত্যার খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ২ অক্টোবর বিকেলে কুমিল্লার দেবীদ্বারে এলাহাবাদ পূর্বপাড়া (উটখাড়া) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আট সাংবাদিক হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের মুঠোফোন, ক্যামেরা ও টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ। হামলায় আহত সাংবাদিকেরা হলেন দৈনিক দিনকালের স্থানীয় প্রতিনিধি পারভেজ সরকার, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি নেছার উদ্দিন, দৈনিক আজকের কুমিল্লার প্রতিনিধি সোহরাব হোসেন, দৈনিক ডাক প্রতিদিনের প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন, আমার দেশের প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক, কালবেলার প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম এবং সাংবাদিক মো. শাহজালাল ও সাইফুল ইসলাম। একইদিন সকাল পৌনে ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের দ্বারা সাংবাদিকরা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা এনসিপির সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছেন। সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে বিএনপির নেতা হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন। এ সময় এনসিপির নেতাকর্মীরা উচ্চস্বরে সেøাগান দিতে থাকেন। তখন এক সাংবাদিক তাদের থামতে অনুরোধ করলে এনসিপির নেতাকর্মীরা উল্টো তাদের ওপর চড়াও হন। এতে সাংবাদিকরা লাঞ্ছিত হন বলে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা এনসিপির সংবাদ সম্মেলন বয়কট করে স্থান ত্যাগ করেন।
৩০ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের একটি ফাস্টফুড দোকানে সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুইচগেইট ফলের বাজারসংক্রান্ত একটি বিষয়ে আলোচনা শেষে সাংবাদিকরা খাওয়ার জন্য বসেছিলেন। এসময় আকাশ নামের এক সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী ব্যক্তির নেতৃত্বে ২০-২৫ জন অজ্ঞাতনামা মব সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন উত্তরা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বিজয় টিভির সাংবাদিক আলাউদ্দিন আল আজাদ, উত্তরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির, উত্তরা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক সকালের সময়ের সাংবাদিক মো. জোবায়ের আহমেদ। সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধরের পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। এমনকি হামলার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা চালায়। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, একের পর এক হামলা ও হুমকির ঘটনায় তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে অনেকেই নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বিষয়ে উত্তরা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা চরমে পৌঁছেছে। অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে উত্তরায় স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রশ্নের মুখে পড়বে। ঘটনার পর রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ‘সমন্বয়ক’ নামধারী ওই মবকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের দাবি, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। ২৫ সেপ্টেম্বর শৈলকুপা উপজেলার ১৮নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিচ্ছন্নতার নামে টাকা নেওয়া হচ্ছে-এমন অভিযোগে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান বাংলাদেশ পোস্টের রোভিং করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার কবীর, বাংলাদেশের খবর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এম বুরহান উদ্দীন ও ভোরের আকাশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সুজন বিপ্লব। তারা অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহারের বক্তব্য শেষে বিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় তার স্বামী ও শৈলকুপা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনায়েত হোসেন সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে জানতে চান কেন তারা সংবাদ সংগ্রহে বিদ্যালয়ে ঢুকেছেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের মারধরের হুমকি দেন এবং নানা অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক দেলোয়ার কবীর শৈলকুপা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে তথ্য সংগ্রহের জন্য গাইবান্ধা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে যান সংবাদকর্মী দিশা আক্তার। পরিচয় দেওয়ার পর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শিশির চন্দ্র দেবনাথ ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর চড়াও হন। অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে মোবাইল কেড়ে নেন। গাইবান্ধায় নারী সাংবাদিককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহমেদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী শিশির চন্দ্র দেবনাথকে গ্রেফতার ও বরখাস্ত করার জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন জেলার সাংবাদিকরা। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। ৪ অক্টোবর দুপুরে শহরের কাচারি বাজার এলাকায় আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। নারী সাংবাদিক দিশা আক্তারকে লাঞ্ছিত এবং সাংবাদিক খায়রুল ইসলাম, মিলন খন্দকার ও দিশা আক্তারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে গাইবান্ধা প্রেসক্লাব। এরআগে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ না হবে, ততদিন আমাদের উপর হামলা-মামলা চলতে থাকবে। এ থেকে উত্তরণে সবাইকে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। একইকথা জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদ এর মফস্বল সম্পাদক মো. আলম হোসেন। তবে কেন পেশাগত কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা এ ধরনের হয়রানি ও রাগের শিকার হচ্ছেন জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে শেখ হাসিনার আমলে সাংবাদিকরা ব্যাপক মামলা-হামলার শিকার হন। তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার শেষ সময়ে ৫০০ মতো সাংবাদিক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। তবে চলতি বছরে তথ্য বলছে, অন্তত ১২৬ সাংবাদিক হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন এবং এর মধ্যে এক নারী সাংবাদিক সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে। সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের ঘটনা, দুর্নীতি উন্মোচন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। সরকারের প্রতি যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্বেগের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করা দরকার সেটি হলো সাংবাদিকদের সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করা। যে ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় সাংবাদিকরা আটক রয়েছেন, আইনি পরিসরে যাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটি অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। সেটি যদি করতে না পারা যায়, তাহলে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যে অপরাধ শেখ হাসিনার আমলে হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতা ইউনূস সরকারও অব্যাহত রাখছেন ধরে নিতে হবে। অচিরেই মামলা-হামলা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সাংবাদিক বা গণমাধ্যমে যেন কোনোভাবেই মব সৃষ্টির শিকার না হন, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যত দ্রুত এটি বন্ধ হবে, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও আইনি শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের যে ভীত তা আরও মজবুত হবে। কেন সাংবাদিকদের ওপর এত ক্ষোভ প্রশ্নে মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, সাংবাদিকতা সমাজের প্রতিচ্ছবি। সমাজকে বুঝতে হলে সাংবাদিকতাকে, সংবাদকে বুঝতে হবে। বর্তমান অস্থিরতায় এমনটা হওয়ারই কথা। মবসন্ত্রাস, আইনশৃঙ্খলার অবনতি সব মিলিয়ে অচলায়তনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত মানুষ নিজেদের গণ্ডিতে হিরো। আমরা নিজেদের জায়গায় সহনশীলতার পরিচয় দিই না। সেদিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এটা কেবল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে নয়, সব পেশাজীবীর ক্ষেত্রেই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

সাংবাদিক নির্যাতন
অপরাধীদের টার্গেটে সাংবাদিকরা
- আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০১:৩৮:৩০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০১:৩৮:৩০ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ